প্রায় দুই বছরের মত বাংলাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো বন্ধ আছে। নতুন করে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গত ২১ জানুয়ারি থেকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আবারও ছুটি দেয়া হয়েছে যা শেষ হওয়ার কথা ছিল ৬ ফেব্রুয়ারি।কিন্তু সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসায় আরো ২ সপ্তাহ ছুটি বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
বুধবার শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি'র বরাত দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়ের এ তথ্য জানান।
এর আগে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। করোনাসংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি আরও কিছুদিন দেখার পক্ষে মত দিয়েছেন, যেহেতু করোনার সংক্রমণ এখনো প্রায় ৩০ শতাংশ। এ জন্য হয়তো ৬ ফেব্রুয়ারির পর আরও এক সপ্তাহ দেখা যেতে পারে। তবে তিনি এ–ও বলেন:
আমরা অবস্থা পর্যালোচনা করছি। প্রয়োজনে ভিন্ন সিদ্ধান্তও হতে পারে।
করোনা সংক্রমণের প্রথম ধাপে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলে দীর্ঘ ১৮ মাস পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হলেও শ্রেণি কার্যক্রম চলছিল স্বল্প পরিসরে। সব শ্রেণির ক্লাস সব দিন হচ্ছিল না।
নতুন করে স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ২১ জানুয়ারি বলেন:
এখন শিশুদের মধ্যে সংক্রমণ ঘটছে। এটি আগে ছিল না। এটা আমলে নিতে হয়েছে। মাঠের চিত্রের ওপর ভিত্তি করেই বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন সরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীরা
করোনা মহামারী নিয়ন্ত্রণে পৃথিবীর অন্য সব দেশের মত সর্বাত্মক বিধিনিষেধ মানার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ খুব কঠোর অবস্থানে থাকতে না পারলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ সময় বন্ধ রেখেছে। এতে শিক্ষার্থীরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বা হচ্ছে সরকারি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের।
সরকারি প্রাইমারি স্কুলের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী হত দরিদ্র এবং কম শিক্ষিত পরিবারের হওয়ায় তাদের পক্ষে প্রাইভেট টিউশনির মাধ্যমে সন্তানের পাঠ কার্যক্রম চালানো বা অর্থ দিয়ে ইন্টারনেট কিনে রিমোট লার্নিংয়ের সুবিধা নেয়া সম্ভব হচ্ছেনা।
সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় বা কলেজ শিক্ষার্থীদের অবস্থাও প্রায় একইরকম বলা যায়। তাই প্রায় দুই বছরের মত শ্রেণি শিক্ষা থেকে দূরে থেকে অনেক শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গিয়েছে। যারা কোনরকম টিকে আছে তারাও উচ্ছন্নে যাচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে শিক্ষক এবং অবিভাবক।
শ্রেণি বৈষম্য বৃদ্ধির আশঙ্কা
বাংলাদেশে শিক্ষা ক্ষেত্রে এমনিতেই একটি শ্রেণি বৈষম্য আছে। যাদের আর্থিক স্বচ্ছলতা আছে তারা তাদের সন্তানদের ভালো প্রাইভেট স্কুলে বা প্রাইভেট টিউশনির মাধ্যমে ভালো পড়াশোনা করাতে সক্ষম হলেও অসচ্ছল পরিবারের সন্তানদের একমাত্র ভরসা সরকারি শিক্ষ প্রতিষ্ঠান।
পাব্লিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলো ছাড়া প্রায় সব সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান গুলোর চেয়ে তুলনামূলক কম হওয়ায় সরকারি স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে থাকে, যা একধরনের শ্রেণি বৈষম্য বলা যেতে পারে।
করোনা জনিত চলমান সংকটে দীর্ঘ সময় স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় অসচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা একেবারেই হচ্ছেনা বিধায় শিক্ষা ক্ষেত্রে এই শ্রেণি বৈষম্য আরো বৃদ্ধির আসংকা করছেন বিশেষজ্ঞরা।