বাংলাদেশে যারা ম্যাজিক বা জাদু দেখায় তারা জাদুর খেলা শুরু করার সময় তালে তালে, "লাগ ভ্যাল্কি লাগ, চোখে মুখে লাগ" বলে উপস্থিত জনতার দিকে শুন্য হাতে কিছু একটা ছুড়ে দেয়ার অভিনয় করে তাদের জাদুর কারসাজি দেখায়।
বর্তমানে শুধু জাদুর খেলায় নয়, রাষ্ট্রের সর্বস্তরে এই ভ্যালকির খেলা চলছে। সকল ক্ষেত্রে জনসাধারণের চোখে মুখে ভ্যাল্কি লাগিয়ে প্রতারকরা হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। এই হাতিয়ে নেয়ার আধুনিক সংস্করণ ইভ্যালির ই-ভ্যাল্কি!
উন্নত দেশগুলোতে অনলাইনে কেনাবেচা শুরু হয়েছে অনেক আগ থেকেই। কিন্তু করোনার সময় সর্বত্র লকডাউন থাকায় হাঠাৎ করে বিশ্বব্যাপী অনলাইন কেনা বেচা বা ই-কমার্স জনপ্রিয় হয়ে উঠে। বিশ্ব সেরা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গুলোর আয় দ্বিগুণ হয়ে যায়।
ঘরে বসেই ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ই-কমার্স একটি বিশ্বাসযোগ্য ও আস্থাশীল মাধ্যম হয়ে উঠছে, সেখানে বাংলাদেশের চিত্রটা ঠিক উল্টো। বাংলাদেশেও কিছু ব্যক্তি নিয়ে আসে ই-কমার্স। তবে কেনা বেচা সহজ করার জন্য নয়, সহজে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার জন্য।
ই-ভেল্কি বা ইলেকট্রনিক ভেল্কি
সম্প্রতি বেশ কটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে অনলাইনে অভিনব প্রতারণার তথ্য উঠে এসেছে। কিন্তু এর পেছনে আসলে দায় কার? দেশের বহুল আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা, বিশ্বাস ও মূল্যবোধের ঘাটতিতে সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থার যেমন দায় রয়েছে, তেমনি এর দায় ক্রেতার ওপরও বর্তায়।
ইভ্যালি মূলত লোভনীয় অফার ও চটকদার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে গ্রাহক আকৃষ্ট করেছে। এ ক্ষেত্রে ইভ্যালি উৎপাদন ব্যয়েরও অনেক কমে পণ্য বিক্রি করেছে, যেটাকে আন্তর্জাতিক ব্যবসার ভাষায় বলে ডাম্পিং। আন্তর্জাতিক ব্যবসায় এই ডাম্পিং প্রতিরোধে কতশত ব্যবস্থা নেওয়া হয়, অথচ ইভ্যালি ঘরে বসেই প্রতিমুহূর্তে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করে গেছে।
ইভ্যালি নিজস্ব বিনিয়োগ না করে আগের গ্রাহকদের অর্ডারের টাকা নিয়ে তাদেরকে পন্য সরবরাহ না করে পরের গ্রাহককে ছাড় দিয়েছে। ইভ্যালির মালিক রাসেল অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট ও জনপ্রিয় মডেল বা সেলিব্রিটির মাধ্যমে চটকদার বিজ্ঞাপন প্রচার করে দ্রুত গ্রাহকসংখ্যা বাড়িয়ে অন্য কোম্পানির কাছে বিক্রির চেষ্টা করে।
এ প্রক্রিয়ায় তারা ২ লাখ ৭৪১ জনের কাছ থেকে ৩১১ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সেলার ও মার্চেন্ট তাদের কাছে পাওনা আরো ২৩৩ কোটি টাকা। এ ধরনের অনৈতিক ব্যবসায়িক পন্থার ক্ষেত্রে কোন সরকারি তদারকি ছিলনা। সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলো পদে পদে অর্জিত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে।
সন্দেহজনক লেনদেনের ঘটনায় গত বছরের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট - BFIU ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি'র লেনদেন এক মাস বন্ধ রাখার পর আবারও সচল করে দেয়। এ দ্বারা মূলত আইনের বাস্তবায়ন ও সুশাসন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তাই ধারণা করা যায় জনগণের চোখে মুখে ই-ভ্যাল্কি বা ইলেকট্রনিক ভ্যাল্কি লাগিয়ে এসব প্রতারণার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর হয় দায়িত্ব হীনতা নয় যোগসাজশ রয়েছে।