বাংলা বার্তা কমিউনিটি নেটওয়ার্ক. . . ব্রিটিশ বাংলাদেশী প্রবাসীদের প্রাণের উচ্ছ্বাস আর আবেগ ও অনুভূতির আরেক নাম BBCNUK

শবে বরাত; প্রকৃত ইবাদত নাকি বিদ'আত?

পবিত্র রামাদান আমাদের খুবই নিকটে। রামাদানের ১৫ দিন আগে অর্থাৎ মধ্য শাবানে বাংলাদেশ সহ এশিয়ার কিছু দেশে 'শবে বরাত' বা ভাগ্য রজনী পালন করা হয়
bbcnuk

بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ‎‎

পবিত্র রামাদান আমাদের খুবই নিকটে। রামাদানের ১৫ দিন আগে অর্থাৎ মধ্য শাবানে বাংলাদেশ সহ এশিয়ার কিছু দেশে 'শবে বরাত' বা ভাগ্য রজনী পালন করা হয়।

Shob i Barat
Shob i Barat

এই হিসাবে আগামী ১৮ই মার্চ দিবাগত রাত এশিয়া অঞ্চলে শবে বরাতের রাত। এই রাতে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলিম এবাদতে মশগুল থাকেন। কিন্তু এই রাতের এবাদত নিয়ে আলেম সমাজের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। সাম্প্রতিক কালের বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলাররা শবে বরাতের রাতে আনুষ্ঠানিক এবাদত করাকে নাজায়েজ বা বিদ'আত বলে ঘোষণা দিয়েছেন।


শবে বরাত কি

শবে বরাত শব্দ দুটি ফার্সি ভাষা থেকে এসেছে। ফার্সিতে শব অর্থ রাত আর বরাত অর্থ হচ্ছে ভাগ্য। একত্রে অর্থ দাঁড়ায় ভাগ্য রজনী বা ভাগ্য নির্ধারিত হয় যে রজনীতে।

আধুনিক আলেমে দ্বীনদের একাংশের মতে- ইসলামের আবির্ভাবের প্রায় ৫০০ বছর পরে এই “শবে বরাত” পরিভাষাটা প্রথম ব্যবহৃত হয়। রাসূলের (সা) যুগে, সাহাবীদের যুগে, তাবেয়ীদের যুগে, তাবে-তাবেয়ীদের যুগেও এই পরিভাষাটি প্রচলিত ছিল না। এখন এই রাতকে যেভাবে উদযাপন করা হয় ইসলামের আবির্ভাবের প্রথম ৫০০ বছরে এভাবে এই রাতকে উদযাপন করা হত না।

বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ সৈয়দ কামাল উদ্দিন জাফরি বলেন, শবে বরাত বলে কিছু নেই। তবে এটি একটি বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন রাত। কিন্তু এরাতে বিশেষ কোন এবাদতের পক্ষে কোন দলিল নেই। ভিডিও 

প্রয়াত ডঃ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর একটি বক্তব্যে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, মধ্য শাবানের রাত একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত। এই রাতে শিরককারী এবং হিংসা বিদ্বেষকারী ব্যাতিত আর সবাইকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন বলে সহি হাদিস আছে। তবে তিনিও বলেন, এই রাতে বিশেষ এবাদতের বিষয়ে কোন স্পষ্ট হাদিস বা প্রমাণ নেই এবং এই রাতে ভাগ্য বরাদ্দ হয় এরকম কোন হাদিসও নেই। ভিডিও  

মুফতি আল্লামা উবায়দুর রহমান খান নদভীর মত

মুফতি আল্লামা উবায়দুর রহমান খান নদভী ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। ৮ এপ্রিল ২০২০ এ দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত মুফতি নদভীর একটি নিবন্ধে শবে বরাতে এবাদতের পক্ষে কিছু হাদিস এবং যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। 

মুফতি নদভীর নিবন্ধের কিছু অংশ 

"নিম্নে কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করা হল: হযরত আলী বিন আবু তালিব রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন, যখন শাবান মাসের অর্ধেকের রজনী আসে [শবে বরাত] তখন তোমরা রাতে নামায পড়, আর দিনের বেলা রোযা রাখ। নিশ্চয় আল্লাহ এ রাতে সূর্য ডুবার সাথে সাথে পৃথিবীর আসমানে এসে বলেন, কোনো গোনাহ ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি আমার কাছে? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব। কোনো রিজিকপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে রিজিক দিব। কোন বিপদগ্রস্থ মুক্তি পেতে চায় কি? আমি তাকে বিপদমুক্ত করে দিব। আছে কি এমন, আছে কি তেমন? এমন বলতে থাকেন ফযর পর্যন্ত। {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-১৩৮৮, শুয়াবুল ঈমান, হাদিস নং-৩৮২২, }


হযরত আয়শা রা. বলেন, এক রাতে রাসূল সা.-কে না পেয়ে খুঁজতে বের হলাম। খুঁজতে খুঁজতে জান্নাতুল বাকীতে [মদীনারত কবরস্থান] গিয়ে আমি তাঁকে দেখতে পেলাম। তিনি বললেন, কী ব্যাপার আয়শা? [তুমি যে তালাশে বের হলে?] তোমার কি মনে হয় আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল তোমার উপর কোন অবিচার করবেন? [তোমার পাওনা রাতে অন্য কোনো বিবির ঘরে গিয়ে রাত্রিযাপন করবেন?] হযরত আয়শা রা. বললেন, আমার ধারণা হয়েছিল আপনি অন্য কোনো বিবির ঘরে গিয়েছেন। রাসূল সা. তখন বললেন, যখন শাবান মাসের ১৫ই রাত আসে অর্থাৎ যখন শবেবরাত হয়, তখন আল্লাহ পাক এ রাতে প্রথম আসমানে নেমে আসেন। তারপর বনু কালব গোত্রের বকরীর পশমের চেয়ে বেশি সংখ্যক বান্দাদেরকে ক্ষমা করে দেন। {সুনানে তিরমিযী, হাদিস নং-৭৩৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং-২৬০২৮, মুসনাদে আব্দ বিন হুমাইদ, হাদিস নং-১৫০৯}
হযরত মুয়াজ বিন জাবাল রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন, অর্ধ শাবানের রাতে [শবে বরাতে] আল্লাহ তাআলা তাঁর সমস্ত মাখলুকের প্রতি মনযোগ আরোপ করেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ ভাবাপন্ন ব্যক্তি ছাড়া সকলকে ক্ষমা করে দেন। {সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং-৫৬৬৫, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদিস নং-২৭৫৪, মুসনাদে ইসহাক বিন রাহওয়াই, হাদিস নং-১৭০২, আল মুজামুল আওসাত, হাদিস নং-৬৭৭৬, আল মুজামুল কাবীর, হাদিস নং-২১৫, সুনানে ইবনে মাজা, হাদিস নং-১৩৯০,
মুসনাদুশ শামীন, হাদিস নং-২০৩, মুসন্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদিস নং-৩০৪৭৯, শুয়াবুল ঈমান, হাদিস নং-৬২০৪}
বিষয়টি তাদের ঘরানার একজন আলেমের বক্তব্য দিয়ে প্রমাণ করছি।
গায়রে মুকাল্লিদদের ইমাম শায়েখ আলবানী রহ. তার সিলসিলাতুস সাহিহাহর ৩ নং খন্ডের ১৩৫ নং পৃষ্ঠায় বলেন, ‘এই হাদিসটি সহীহ’ এটি সাহাবাদের এক জামাত বর্ণনা করেছেন বিভিন্ন সূত্রে যার একটি অন্যটিকে শক্তিশালী করেছে। তাদের মাঝে রয়েছেন, মুয়াজ বিন জাবাল রা., আবু সা’লাবা রা., আব্দুল্লাহ বিন আমর রা., আবু মুসা আশয়ারী রা., আবু হুরায়রা রা., আবু বকর সিদ্দীক রা., আউফ বিন মালিক রা., আয়েশা রা. প্রমুখ সাহাবাগণ।


উপরে বর্ণিত সবক’টি বর্ণনাকারীর হাদিস তিনি তার কিতাবে আনার মাধ্যমে সুদীর্ঘ আলোচনার পর শেষে তিনি বলেন, সারকথা হলো, এই যে, নিশ্চয় এই হাদিসটি এই সকল সূত্র পরম্পরা দ্বারা সহীহ, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আর সহীহ হওয়া এর থেকে কম সংখ্যক বর্ণনার দ্বারাও প্রমাণিত হয়ে যায়, যতক্ষণ না মারাত্মক কোনো দুর্বলতামুক্ত থাকে, যেমন এই হাদিসটি হয়েছে। ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. তাঁর কিতাবে লিখেছেন, অতিতযুগের বড় আলেম ও শায়েখরা শবেবরাতে বেশি ইবাদত বন্দেগি করতেন।"

উপসংহার 

মুফতি উবায়দুর রহমান খান নদভী এশিয়া অঞ্চলের প্রচলিত পদ্ধতির  শবে বরাত পালনের  পক্ষে অবস্থান নিলেও উপরোল্লিখিত হাদিস এবং  আলোচনায় নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহিসসালামের সময়ে শবে বরাতের রাতে দলবেঁধে মসজিদে গিয়ে আনুষ্ঠানিক এবাদতের কোন প্রমাণ মিলেনি। তবে উল্লেখিত হাদিসগুলো থেকে প্রতিয়মান হয় যে, শাবানের ১৫ তারিখ রাত একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত। এই রাতে ঘরে একাকি এবাদত করার ক্ষেত্রে কোন বাধা নেই। 


BBCN থেকে আরো পড়ুনঃ

Getting Info...

إرسال تعليق

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.