হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাক কি?
হৃদযন্ত্র বা হৃদপিণ্ডের কাজ হচ্ছে বিরতিহীনভাবে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে রক্ত সঞ্চালন করা। হৃদযন্ত্র আবার নিজের ভিতরও রক্ত সঞ্চালন করে।
 |
Heart attack |
হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাক হল একটি গুরুতর অবস্থা যখন হৃদপিণ্ডের নিজের ভিতর রক্তের সরবরাহ হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। হৃৎপিণ্ডের ভিতরে থাকা রক্তনালীগুলির ভিতর চর্বি (ফ্যাট) জমে হটাৎ ব্লক তৈরি করে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ করে দেয়। একজন হার্টের ডাক্তার একটি ভিডিওতে বিষয়টি পরিষ্কার ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন।
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা এবং ঘাম। মনে হতে পারে যে বুকে একটি ভারী বস্তু দ্বারা চেপে ধরা হয়েছে এবং ব্যথা বুক থেকে চোয়াল, ঘাড়, বাহু এবং পিঠে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এটা জানা গুরুত্বপূর্ণ যে প্রত্যেকের বুকে তীব্র ব্যথা হয় না। এটি বিশেষ করে অনেক মহিলার ক্ষেত্রে হয়। ব্যথা খুব হালকা হতে পারে এবং এটা পেটের সমস্যা মনে করে রোগী ভুল করতে পারে যাতে বড় ধরনের বিপদ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে ব্যাথা বুকের মাঝখানে এবং বাম পাশে হয়।
করণীয়
যদি আপনি মনে করেন যে কারো হার্ট অ্যাটাক হয়েছে তাহলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। হার্ট অ্যাটাকের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে চিকিৎসা করা দরকার। হৃৎপিণ্ডে রক্তের সরবরাহ পুনরুদ্ধার করার জন্য ওষুধ বা অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। লক্ষ্মণ দেখা মাত্র সাথে সাথে এম্বুল্যান্স কল করুন। (
NHS UK for heart attack click here)
হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাবেন কিভাবে
মানুষের আকষ্মিক মৃত্যুর একটি অন্যতম কারণ হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগ। হৃদরোগের কিছু ঝুঁকি আপনি পরিবর্তন করতে পারবেননা। যেমন পারিবারিক ইতিহাস, লিঙ্গ বা বয়স। কিন্তু এমন অনেক উপায় রয়েছে যাতে আপনি আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারেন।
আমেরিকার মাইও ক্লিনিক (
Mayo Clinic) হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোর ৭টি টিপস দিয়েছেঃ
১. ধুমপান এবং তামাক সেবন থেকে বিরত থাকা
তামাকের কেমিক্যাল হৃদপিণ্ড ও রক্তনালীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। সিগারেটের ধোঁয়া রক্তে অক্সিজেন কমিয়ে দেয়, যা রক্তচাপ এবং হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি করে। এতে শরীর এবং মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করতে হার্টকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয় এবং হার্টের কর্মক্ষমতা কমে যায়। সিগারেট ছাড়ার একদিনের মধ্যেই হৃদরোগের ঝুঁকি কমতে শুরু করে এবং একবছরের মধ্যে ঝুঁকি অর্ধেকে নেমে আসে।
২. প্রতিদিন নিয়মিত শারিরীক ব্যায়াম করা
শারীরিক ব্যায়াম ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এটি উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস এর মতো হার্টের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে এমন অবস্থা বিকাশের সম্ভাবনাও হ্রাস করে। সপ্তাহে ১৫০ মিনিট মাঝারি অ্যারোবিক ব্যায়াম, যেমন দ্রুত গতিতে হাঁটা, সপ্তাহে ৭৫ মিনিট দৌড়ানো, সপ্তাহে দুই বা তার বেশি শক্তি প্রয়োগ হয় এমন কোন ব্যায়াম করা।
যদি এগুলো করতে না পারেন তাহলে ছোট ছোট কাজগুলিও আপনার হার্টের উপকার করবে। বাগান করা, গৃহস্থালির কাজ, সিঁড়ি বেয়ে উঠা-নামা করা ইত্যাদি।
৩। স্বাস্থ্যকর খাদ্য খাওয়া
একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস হৃদপিণ্ডকে রক্ষা করতে, রক্তচাপ, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
হার্ট বান্ধব খাদ্য হচ্ছে শাক - সবজী ও ফল, মটরশুটি, চর্বিহীন মাংস এবং মাছ, কম চর্বি বা চর্বিহীন দুগ্ধজাত খাবার, আস্ত শস্যদানা, স্বাস্থ্যকর চর্বি যেমন জলপাই তেল (Olive Oil) ইত্যাদি।
এছাড়া নিম্নলিখিত খাবারগুলো কম খাওয়া উচিৎঃ লবণ, চিনি, প্রক্রিয়াজাত কার্বোহাইড্রেট
মদ, স্যাচুরেটেড ফ্যাট (লাল মাংস ও পূর্ণ চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত পণ্য) এবং ট্রান্স ফ্যাট (ভাজা ফাস্ট ফুড, চিপস, বেকড পণ্য) ইত্যাদি।
৪। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
অতিরিক্ত ওজন হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। পেটে চর্বি জমা হলে বা কোমরের পরিধি তুলনামূলক বেশি হলে শরীরের ওজন বেশি হয়। পুরুষদের ক্ষেত্রে ৪০ ইঞ্চি (১০১.৬ সেন্টিমিটার) আর মহিলাদের ক্ষেত্রে ৩৫ ইঞ্চি (৮৮.৯ সেমি) এর বেশি হলে বুজতে হবে আপনার ওজন বেশি যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
৫। ভালো ঘুম হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি রাতে কমপক্ষে সাত ঘন্টা ঘুম প্রয়োজন। ঘুমকে আপনার জীবনে অগ্রাধিকার দিন। একটি ঘুমের সময়সূচী সেট করুন, প্রতিদিন একই সময়ে বিছানায় যাওয়া এবং জেগে ওঠা নিয়মিত করুন। আপনার শোবার ঘর অন্ধকার এবং শান্ত রাখুন, যাতে ঘুমানো সহজ হয়। তবে অতিরিক্ত ঘুম এবং দিনের বেলায় ঘুম হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
৬। মানসিক চাপ কমানো
অতিরিক্ত মানসিক চাপ হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। মানসিক চাপ কমাতে শারীরিক ব্যায়াম বিকল্প হতে পারে।
৭। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা
ব্লাড প্রেসার, কোলেস্টেরল লেভেল, ডায়াবেটিস ইত্যাদি নিয়মিত পরীক্ষা করার মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে রাখা সম্ভব।
আপনার যদি উচ্চ কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের মতো কোনো অবস্থা থাকে, তাহলে আপনার ডাক্তার ওষুধ লিখে দিতে পারেন এবং আপনাকে জীবনধারা পরিবর্তনের সুপারিশ করতে পারেন। ডাক্তারের নির্দেশ অনুসারে ওষুধ গ্রহণ নিশ্চিত করুন এবং একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারার পরিকল্পনা অনুসরণ করুন।
--------