বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
রোজার সূচনা ও ইতিহাস
ইসলামিক পরিভাষায় সুবেহ সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সব ধরনের পানাহার, যৌনাচারসহ, অপচয়-অপব্যবহার, অন্যায় আচরণ ও অত্যাচার-অবিচার থেকে বিরত থাকার নাম রোজা।
রোজা রাখার বিধান সর্বযুগেই ছিল। তবে প্রথম কখন ও কোন রোজা ফরজ ছিল এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেন, ১০ মহররম অর্থাৎ আশুরার রোজাই সর্বপ্রথম ফরজ ছিল। আবার কারো কারো মতে, আইয়ামে বিজ অর্থাৎ প্রত্যেক চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা ফরজ ছিল। বস্তুত হজরত আদম (আ:) থেকে শুরু করে ঈসা (আ:) পর্যন্ত সব যুগেই বছরের বিভিন্ন সময়ে রোজা রাখার বিধান ছিল। সর্বশেষ হজরত মোহাম্মদ (সা:) এর উপর ঐহি নাজিলের মাধ্যমে পুরো রামাদান মাসে সমগ্র মানব জাতির উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আদি মানব হজরত আদম (আ:) এর ওপর রোজার বিধান প্রদান করেন। এর মাধ্যমেই মানব ইতিহাসে সর্বপ্রথম রোজার প্রচলন শুরু হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
‘হে ইমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা খোদাভীরু হতে পার।’ (সুরা বাকারা: ১৮৩)। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা আলুসি (র.) স্বীয় তাফসির গ্রন্থ ‘রুহুল মাআনি’তে উল্লেখ করেছেন যে, উপরোক্ত আয়াতে ‘মিনকাবলিকুম’ দ্বারা হজরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে হজরত ঈসা (আ.) পর্যন্ত সব নবী-রাসূলের জামানা বুঝানো হয়েছে।
কোরআন ও হাদিস গবেষণা করলে রোজার ইতিহাস সম্পর্কে আরো জানা যায়, মহান আল্লাহ তায়ালা হজরত আদম (আ.)-কে জান্নাতে প্রেরণ করে একটি গাছের ফল খেতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বিশেষ এক ধরনের রোজা রাখার নির্দেশ প্রদান করলেন। এ ব্যাপারে আল কোরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেন,
وَ قُلۡنَا یٰۤاٰدَمُ اسۡکُنۡ اَنۡتَ وَ زَوۡجُکَ الۡجَنَّۃَ وَ کُلَا مِنۡهَا رَغَدًا حَیۡثُ شِئۡتُمَا ۪ وَ لَا تَقۡرَبَا هٰذِهِ الشَّجَرَۃَ فَتَکُوۡنَا مِنَ الظّٰلِمِیۡنَ
"হে আদম! তুমি এবং তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করতে থাক এবং সেখানে যা চাও, যেখান থেকে চাও, পরিতৃপ্তিসহ খেতে থাক, কিন্তু তোমরা ঐ গাছের কাছে যেও না। (যদি যাও বা তার ফল ভক্ষণ কর) তাহলে জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (সূরা বাকারা, আয়াত-৩৫)।
# "আমারা ওদের চাকর নাকি যে ওদের কথা মতো রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিবৃতি দেব!’'' -ইমরান খান
কিন্তু হজরত আদম (আ.) ও হজরত হাওয়া (আ.) শয়তানের প্ররোচনার শিকার হয়ে ওই গাছের ফল ভক্ষণ করেছিলেন এবং এর পরিণামে মহান আল্লাহ তায়ালা তাদের ভূ-পৃষ্ঠে পাঠিয়ে দিলেন। অতঃপর তারা উক্ত ভুলের জন্য যারপরনাই অনুতপ্ত হন, তওবা ইস্তিগফার করেন এবং এর কাফ্ফারাস্বরূপ ধারাবাহিক ৪০ বছর রোজা রেখেছিলেন। মুফাসসিরে কেরাম বলেন, এটাই ছিল মানব ইতিহাসের প্রথম রোজা।
রোজা শুরুর ব্যাপারে ইতিহাসের তথ্য
প্রথম রোজার সময় সম্পর্কে ধর্মীয় তথ্যের বাহিরে গবেষণা মূলক তথ্যও রয়েছে। ইংল্যান্ডের বিখ্যাত দার্শনিক স্পেন্সার নিজের বই ‘প্রিন্সিপাল অফ সোশিয়লজি’(Principles of Sociology)তে কতগুলো বন্য সম্প্রদায়ের উদাহরণ এবং জীব বৃত্তান্তের ওপর গবেষণা করে লিখেছেন যে, রোজার প্রাথমিক মানদণ্ড এভাবেই হয়তো হয়ে থাকবে যে আদিম বন্য যুগের মানুষ স্বভাবতঃই ক্ষুধা-পিপাসায় আক্রান্ত থাকতো এবং তারা মনে করতো যে, আমাদের আহার্য বস্তু আমাদের পরিবর্তে এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মৃতদের নিকট পৌঁছে যায়। কিন্তু অনুমানসিদ্ধ উপাত্তকে যুক্তি ও বুদ্ধির আওতাভুক্ত লোকেরা কখনো স্বীকার করে নেয়নি।
রামাদান মাসে রোজার ঐতিহাসিক তথ্য
৭৪৭ সালের একজন আরব লেখক আবু যানাএর মতে, উত্তর ইরাকের আল জাজিরা অঞ্চলে একটি মান্দাইন সমাজ ইসলাম গ্রহণের আগেও রামাদান মাসে রোজা রাখত। এমনকি কথিত আছে যে, ইব্রাহিম (আ.)-কে দেয়া সহিফাও নাজিল হয়েছিল রামাদান মাসের ১ তারিখে, তাওরাত ৬ তারিখে, যাবুর ১২ তারিখে আর ইঞ্জিল ১৩ তারিখে। আরবের বাহিরে রামাদান মাস হিসেব করা না হলেও ভিন্নজাতিক পঞ্জিকার সাথে মিলিয়ে এই হিসাব স্থির করা হয়েছে বলে বলা হয়।
এছাড়া তাফসিরে ইবনে কাসিরে উল্যেখ করা হয়েছে, "হাসান বসরি (রহ.) বলেন, পূর্ববর্তী উম্মতদের ওপরও পূর্ণ একমাস রোজা ফরজ ছিল। মুগাফ্ফাল ইব্ন হানযালা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে, রাসূল (সা.) বলেন, খ্রিষ্টানদের ওপর রমজানের একমাস রোজা ফরজ হয়েছিল।
আল্লামা আলুসি (রহ.) বলেন, কিতাবিদের ওপরও রমজানের রোজা ফরজ ছিল। তারা তা বর্জন করে বছরে একদিন উপবাস পালন করে, যেদিন ফেরাউন লোহিত সাগরে নিমজ্জিত হয়। পরবর্তী সময়ে ইহুদিদের দেখাদেখি খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ও একই দিনে রোজা পালন করে। তবে তারা এর সঙ্গে আগে-পিছে আরো দুইদিন সংযোজন করে নেয়। পরবর্তীকালে তাদের জনৈক সম্রাট অসুস্থ হয়ে পড়লে তারা এ মর্মে মান্নত করে যে, আল্লাহ তাকে রোগমুক্ত করলে রোজার মেয়াদ আরো দশ দিন বাড়িয়ে দেবে। এরপর পরবর্তী সম্রাটের আমলে গোশত খেতে গিয়ে বাদশাহর মুখে রোগব্যধি দেখা দিলে তারা অতিরিক্ত সাতদিন রোজা মানত করে। পরে অন্য সম্রাট আরো তিন দিন বাড়িয়ে দেন এবং গ্রীষ্ম কালে রোজা কষ্টসাধ্য বিধায় রোজা পালনের সময় বসন্তকালে নির্ধারণ করেন। এভাবে রোজা ত্রিশের সংখ্যা অতিক্রম করে পঞ্চাশের কোটায় পৌঁছে যায়। (রুহুল মাআনি ও তাফসিরে রাযি)।
মোহাম্মদ (সা:) এর প্রথম রোজা শুরু
মদিনার ইহুদিরা মহররমের ১০ তারিখে রোজা রাখে। বোখারি ও মুসলিম শরিফের একটি হাদিস মতে, হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) মদিনায় হিজরতের পর ইহুদিদের এই রোজা সম্পর্কে তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, 'আজকে তোমরা কিসের রোজা রাখছ? উত্তরে তারা বলল, আজ সেই দিন যেদিন মহান আল্লাহ তায়ালা হজরত মুসা (আ.) ও তার কওমকে ফেরাউনের কবল থেকে মুক্ত করেছিলেন আর ফেরাউনকে সদলবলে নীল দরিয়ায় ডুবিয়ে মেরেছিলেন। তার শুকরিয়াস্বরূপ এ দিন মুসা (আ.) রোজা রেখেছিলেন। তাই আমরাও এ দিন রোজা রাখি"। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আমরা তোমাদের থেকে মুসাকে (আ.) অনুসরণের অধিক হকদার। এরপর তিনি আশুরার দিন রোজা রাখলেন এবং সাহাবায়ে কেরামদের রোজা রাখার নির্দেশ প্রদান করলেন। দ্বিতীয় হিজরির ১০ শাবান রমজান মাসে রোজা ফরজ মর্মে পবিত্র কোরআনে আয়াত নাজিল হয়। রোজা ফরজ করার উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লাহ তায়লা পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতের শেষে বলেন, হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যেন তোমরা পরহেজগারি (তাকওয়াহ) অর্জন করতে পার।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে রামাদান মাসের রোজা সঠিক ভাবে পালনের তৌফিক দান করুন যাতে আমরা তাকওয়াহ অর্জন করতে পারি।
আমীন
- পরমাণু হামলার ইঙ্গিত পুতিনের; ৩০ মিনিটে হতে পারে ১০ কোটি মানুষের মৃত্যু
- দুই লাখের বেশি ইউক্রেনীয়ানকে ইউকেতে আসার সুযোগ দিচ্ছে যুক্তরাজ্য সরকার
- আন্তর্জাতিক ক্রীড়ায় নিষিদ্ধ রাশিয়া; খেলতে পারবেনা বিশ্বকাপ, ইউরোপা লীগ, চ্যাম্পিয়নস লীগ
- ছাত্রাবস্থায়ই মারপিট করতেন পুতিন; বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে তৈরি করেছিলেন নিজের গ্যাং